শেয়ারড হোস্টিং: কীভাবে আপনার ওয়েবসাইট হোস্টিংয়ের এর ক্ষেত্রে একটি সহজ ও সাশ্রয়ী অপশন হতে পারে

আপনি যদি নিজের জন্য অথবা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য  একটি ওয়েবসাইট রাখতে চান এবং সেটি ইন্টারনেটে সবার জন্য উন্মুক্ত করতে চান তাহলে আপনার অবশ্যই একটি হোস্টিং নেয়ার প্রয়োজন হবে। ওয়েবসাইট তৈরির পর যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হল ওয়েব হোস্টিং। এটি এমন একটি সার্ভিস, যা আপনার ওয়েবসাইটের ফাইলগুলোকে সার্ভারে সংরক্ষণ করে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য সেগুলো দৃশ্যমান করে তোলে। শেয়ারড হোস্টিং, ভিপিএস (VPS), ডেডিকেটেড হোস্টিংসহ বিভিন্ন ধরনের হোস্টিং প্ল্যান রয়েছে। ওয়েব তবে প্রশ্ন হলো, কোন হোস্টিং প্ল্যানটি আপনার জন্য সেরা? আজকের এই পোস্টে আমরা শেয়ারড হোস্টিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যাতে আপনি জানতে পারেন এটি কী, কীভাবে কাজ করে এবং এর সুবিধা অসুবিধা।

শেয়ারড হোস্টিং কী?

শেয়ারড হোস্টিং একটি জনপ্রিয় ওয়েব হোস্টিং সেবা, যেখানে একাধিক ওয়েবসাইট একটি একক সার্ভারের রিসোর্স ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে। অর্থাৎ, একটি শেয়ারড হোস্টিং প্ল্যানে একই সার্ভারের মেমোরি, ব্যান্ডউইথ, স্টোরেজ এবং অন্যান্য রিসোর্স অন্যান্য গ্রাহকদের ওয়েবসাইটের সাথে ভাগাভাগি (শেয়ারিং) করা হয়। এর ফলে খরচ কম পড়ে। এটি ছোট ব্যবসা, ব্যক্তিগত ব্লগ, বা বেসিক লেভেলের ওয়েবসাইটের জন্য আদর্শ।

শেয়ারড হোস্টিং কীভাবে কাজ করে?

শেয়ারড হোস্টিং সার্ভারে একাধিক ওয়েবসাইট হোস্ট করা হয়। প্রত্যেক ওয়েবসাইট তার নির্দিষ্ট কোটা অনুযায়ী রিসোর্স ব্যবহার করতে পারে। সার্ভারের রিসোর্স যেমন সিপিইউ (CPU), ্যাম (RAM), এবং ডিস্ক স্পেস, এই সবকিছু নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভাগ করা হয়। শেয়ারড হোস্টিং প্রোভাইডার সার্ভারের রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা আপডেটের দায়িত্বে থাকে, ফলে ব্যবহারকারীরা উচ্চতর টেকনিক্যাল দক্ষতা ছাড়াই সহজে ওয়েবসাইট চালাতে পারেন।

Advantages-and-disadvantages-of-shared-hosting

শেয়ারড হোস্টিংয়ের সুবিধা

শেয়ারড হোস্টিংয়ে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে, যার কারণে এটা গ্রাহকদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। সেই সুবিধাগুলো হলো:

সাশ্রয়ী খরচ

শেয়ারড হোস্টিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এতে খরচ অনেক কম। যেহেতু একটি সার্ভারের রিসোর্স একাধিক ওয়েবসাইটের মধ্যে ভাগ করা হয়, তাই সেবার মূল্য তুলনামূলকভাবে কম হয়। এটি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগত প্রকল্পের জন্য আদর্শ, যেখানে বড় পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ সম্ভব নয়।

সহজ হোস্টিং ব্যবস্থাপনা

শেয়ারড হোস্টিং-এর সাথে সাধারণত একটি ইউজারফ্রেন্ডলি কন্ট্রোল প্যানেল দেয়া হয়, যেমন সিপ্যানেল (cPanel), যা নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য ওয়েবসাইট পরিচালনা সহজ করে তোলে। ওয়েবসাইট আপলোড, ডোমেইন ম্যানেজমেন্ট, ই-মেইল সেটআপ, এবং ডেটাবেস ম্যানেজমেন্ট সহ অন্যান্য কাজ করা সহজ হয়।

রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা

শেয়ারড হোস্টিং প্রোভাইডার সাধারণত সার্ভারের রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। সার্ভারের নিয়মিত আপডেট, ডেটা ব্যাকআপ, এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রোভাইডারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এর ফলে ব্যবহারকারীদের এইসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।

টেকনিক্যাল সাপোর্ট

প্রায় সকল শেয়ারড হোস্টিং প্রোভাইডার ২৪/ টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে থাকে। কোনো সমস্যা হলে বা ওয়েবসাইটে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে, ব্যবহারকারীরা সরাসরি প্রোভাইডারের টেকনিক্যাল সাপোর্ট টিমের সাহায্য নিতে পারেন।

শেয়ারড হোস্টিংয়ের অসুবিধা

যদিও শেয়ারড হোস্টিংয়ের অনেক সুবিধা রয়েছে, তবুও এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, যা আপনাকে হোস্টিং নেয়ার আগে বিবেচনা করতে হবে:

 

পারফরম্যান্স সীমাবদ্ধতা

যেহেতু একই সার্ভারের রিসোর্স একাধিক ব্যবহারকারী ভাগ করে নেয়, তাই কখনও কখনও সার্ভারের পারফরম্যান্স কমে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ওয়েবসাইট বেশি রিসোর্স ব্যবহার করে, তাহলে অন্যান্য ওয়েবসাইটের লোড টাইম বাড়তে পারে।

 

কাস্টমাইজেশনের সীমাবদ্ধতা

শেয়ারড হোস্টিং প্ল্যানে সার্ভারের কনফিগারেশন বা সেটিংস কাস্টমাইজ করার সুযোগ সীমিত থাকে। যারা উন্নত সেটআপ বা নির্দিষ্ট সফটওয়্যার ইনস্টল করতে চান, তাদের জন্য শেয়ারড হোস্টিং উপযুক্ত নাও হতে পারে।

 

নিরাপত্তা ঝুঁকি

শেয়ারড হোস্টিংয়ে একটি সার্ভারে একাধিক ওয়েবসাইট হোস্ট করা হয়, যার ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। যদি একটি ওয়েবসাইট আক্রান্ত হয়, তাহলে অন্য ওয়েবসাইটগুলোরও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

শেয়ারড হোস্টিং কার জন্য উপযুক্ত?

শেয়ারড হোস্টিং মূলত ছোট ব্যবসা, ব্যক্তিগত ব্লগ, বা সেইসব ওয়েবসাইটের জন্য উপযুক্ত, যেগুলোর ট্র্যাফিক কম এবং কম বাজেটে চালানো সম্ভব। যেমন:

  • নতুন ব্যবসা বা স্টার্ট-আপ যারা একটি সাধারণ ওয়েবসাইট চালাতে চায়।
  • ব্লগার বা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যারা তাদের কাজকে অনলাইনে উপস্থাপন করতে চায়।
  • শিক্ষার্থীরা যারা প্রজেক্ট বা পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করতে চায়।

  

যাদের ব্যবসা খুব বেশি বড় নয় এবং যাদের ওয়েবসাইটে অল্প ট্র্যাফিক আসে, তাদের জন্য শেয়ারড হোস্টিং একটি আদর্শ সাশ্রয়ী সমাধান।

শেয়ারড হোস্টিং বনাম অন্যান্য হোস্টিং

শেয়ারড হোস্টিংয়ের বিকল্প হিসেবে ভিপিএস, ডেডিকেটেড সার্ভার, এবং ক্লাউড হোস্টিং রয়েছে। প্রতিটি হোস্টিং প্ল্যানের নিজস্ব সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। যেমন:

  • ভিপিএস (VPS): VPS বা Virtual Private Server হলো এমন একটি হোস্টিং পরিষেবা যেখানে একটি physical সার্ভারকে ভার্চুয়াল সার্ভারে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি ভিপিএস সার্ভারের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম, রিসোর্স (CPU, RAM, স্টোরেজ) এবং আইপি অ্যাড্রেস থাকে।শেয়ারড হোস্টিংয়ের থেকে বেশি রিসোর্স এবং কাস্টমাইজেশন সুবিধা দেয়, তবে এতে তুলনামূলকভাবে বেশি খরচ হয়।
  • ডেডিকেটেড সার্ভার: এখানে আপনি পুরো সার্ভারটি একা ব্যবহার করতে পারেন, যার ফলে সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স এবং কাস্টমাইজেশন সুবিধা পেতে পারেন। তা ছাড়াও এতে সাধারণ ভিপিএসের থেকে অনেক বেশি রিসোর্স দেয়া হয়ে থাকে। তবে এর খরচ অনেক বেশি। সাধারণত বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ডেডিকেটেড সার্ভার ব্যবহার করে থাকে অধিক ডাটা ট্রান্সফার আর সংরক্ষণের সুবিধা থাকার কারণে।
  • ক্লাউড হোস্টিং: এটি ডিস্ট্রিবিউটেড সার্ভারে ওয়েবসাইট হোস্ট করে, যার ফলে অধিক ট্র্যাফিক হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা থাকে এবং এতে শেয়ারড হোস্টিংয়ের থেকে বেশি খরচ হতে পারে।

শেয়ারড হোস্টিং কেন আপনার জন্য সঠিক হতে পারে?

যাদের বাজেট সীমিত এবং যারা নতুন ব্যবসা শুরু করছেন, তাদের জন্য শেয়ারড হোস্টিং আদর্শ হতে পারে। এটির কম খরচ, সহজ ব্যবস্থাপনা এবং ২৪/৭ টেকনিক্যাল সাপোর্টের কারণে এটি ছোট ব্যবসা, ব্যক্তিগত ব্লগ বা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই কার্যকর।

শেয়ারড হোস্টিং নেয়ার আগে যেসব বিষয় বিবেচনা করবেন

শেয়ারড হোস্টিং নেয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হবে:

  • আপটাইম গ্যারান্টি: ৯৯.৯% আপটাইম গ্যারান্টি দেওয়া প্রোভাইডার বেছে নিন।
  • ব্যান্ডউইথ এবং স্টোরেজ: আপনার ওয়েবসাইটের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যান্ডউইথ এবং স্টোরেজ দেখুন।
  • কাস্টমার সাপোর্ট: ২৪/৭ কাস্টমার সাপোর্ট সহকারী থাকতে হবে।
  • স্কেলিং অপশন: আপনার ট্র্যাফিক বাড়লে সহজেই আপগ্রেড করার অপশন থাকতে হবে।

শেয়ারড হোস্টিং-এর অন্যান্য প্রয়োজনীয় টিপস

  • রিভিউ এবং রেটিং দেখুন: যে হোস্টিং প্রোভাইডার থেকে শেয়ারড হোস্টিং নিতে যাচ্ছেন, তাদের গ্রাহক রিভিউ ও রেটিং দেখে নিতে পারেন।
  • সিকিউরিটি ফিচার চেক করুন: SSL সার্টিফিকেট, ডিডস প্রোটেকশন, অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সেবা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত।
  • রিসোর্স লিমিটের খোঁজ নিন: কিছু প্রোভাইডার রিসোর্সের লিমিট খুব কম দেয় যা পরবর্তীতে সমস্যার কারণ হতে পারে।

কেন Dhaka Web Host থেকে শেয়ারড হোস্টিং নেবেন?

Dhaka Web Host থেকে শেয়ারড হোস্টিং নেওয়া অনেক কারণেই একটি স্মার্ট সিদ্ধান্ত হতে পারে। নিচে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো যা আমাদের শেয়ারড হোস্টিংকে বিশেষভাবে কার্যকর ও গ্রাহক-বান্ধব করে তোলে:

  1. সাশ্রয়ী প্যাকেজ: Dhaka Web Host বিভিন্ন বাজেটের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন শেয়ারড হোস্টিং প্যাকেজ অফার করে, যা ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে বড় প্রকল্পের জন্যও উপযুক্ত। আমাদের প্যাকেজগুলোয় সর্বোচ্চ সুবিধা ও কম খরচ নিশ্চিত করা হয়।
  2. উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা:  আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করতে আমরা SSL সার্টিফিকেট এবং ডিডস প্রোটেকশনসহ উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে থাকি। এটি ওয়েবসাইটের ডেটা ও ব্যবহারকারীদের তথ্যকে সুরক্ষিত রাখে।
  3. ২৪/৭ টেকনিক্যাল সাপোর্ট: আমাদের দক্ষ টেকনিক্যাল টিম ২৪/৭ সাপোর্ট প্রদান করে। যেকোনো সমস্যা বা প্রশ্নের সমাধানে দ্রুত এবং কার্যকরী সহায়তা পেতে পারেন, যা গ্রাহকদের ওয়েবসাইট পরিচালনা সহজতর করে তোলে।
  4. সহজ ব্যবস্থাপনা ও আপগ্রেড অপশন: শেয়ারড হোস্টিং প্ল্যানে কন্ট্রোল প্যানেল সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য একাধিক টুল অন্তর্ভুক্ত থাকে। এছাড়াও, ব্যবসার প্রসারে প্রয়োজন অনুযায়ী সহজেই আপগ্রেড করা যায়।
  5. নির্ভরযোগ্য আপটাইম: আমরা ৯৯.৯% আপটাইম গ্যারান্টি দিয়ে থাকি, যা ওয়েবসাইটের সর্বোচ্চ কার্যকারিতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। আপনার সাইট সর্বদা অনলাইনে থাকুক, আমরা সেটাই নিশ্চিত করি।

Dhaka Web Host থেকে শেয়ারড হোস্টিং নিয়ে গ্রাহকরা পান উন্নত সুবিধা, নিরাপত্তা, এবং নির্ভরযোগ্য সাপোর্ট যা তাদের ওয়েবসাইট পরিচালনাকে সহজ, সাশ্রয়ী, এবং নিশ্চিন্ত রাখে।

 

আপনি কি নিজের ব্যবসা বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য শেয়ারড হোস্টিং সেবা খুঁজছেন? তাহলে DWH হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। আমাদের প্যাকেজগুলো এবং গ্রাহক সহায়তা সম্পর্কে আরও জানতে, অনুগ্রহ করে DWH-এর ওয়েবসাইট  ভিজিট করুন। এখানে আপনি আমাদের বিভিন্ন হোস্টিং প্ল্যানের বিস্তারিত বিবরণ, প্রয়োজনীয় ফিচার, এবং মূল্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।

শেয়ারড হোস্টিং হলো ওয়েবসাইট হোস্টিংয়ের জন্য সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য একটি সমাধান, যা ছোট ব্যবসা, ব্লগার, এবং নতুন ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের জন্য আদর্শ। যদিও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, (যেমন পারফরম্যান্স নিরাপত্তা), তবুও এর সাশ্রয়ী খরচ এবং ব্যবহারবিধি একে জনপ্রিয় করে তুলেছে। আপনার যদি কম বাজেটের মধ্যে একটি সাধারণ ওয়েবসাইট চালানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে শেয়ারড হোস্টিং হতে পারে আপনার জন্য সঠিক পছন্দ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *